মৌলভীবাজারের ১৯টি সিলিকা বালু উত্তোলনের ইজারা অবৈধ
প্রকাশিত : ০৪ জুলাই ২০১৮ ২:৪৬ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজার সংবাদদাতা:: মৌলভীবাজারের ছয় উপজেলার ১৯টি সিলিকা বালুমহালের ইজারা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে পরিবেশ ছাড়পত্র ও পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ না করে কোনো বালুমহাল ইজারা দেয়া যাবে না মর্মেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশনাসহ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে বেলার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর।
আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর সাংবাদিকদের জানান, ওই ১৯টি বালুমহাল থেকে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক পদ্ধতিতে বালু অনিয়ন্ত্রিতভাবে উত্তোলন করা হচ্ছিল। ফলে ওখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছিল। যে কারণে বেলা রিটটি করে।
তিনি জানান, ২০১৩ সালের ১৮ জুন মৌলভীবাজার জেলার ৫১টি পাহাড়ি ছড়া সিলিকা বালুসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর মধ্যে ১৯টিকে অযান্ত্রিক পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেয়া হয়।
তবে, ইজারা দেয়ার আগে কোনো পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (ইআইএ) করা হয়নি। ইজারাগ্রহীতা কোনো পরিবেশগত ছাড়পত্র (ইসিসি) দাখিল করেনি।
অথচ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ না করে সিলিকা বালুসমৃদ্ধ ওই এলাকা ইজারা দেয়া হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পরিবেশগত সমীক্ষা ছাড়াই মৌলভীবাজারের ছয়টি উপজেলায় রাবার ও চা-বাগানের ১৯টি পানির ছড়া (খাল) থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন এবং ইজারা প্রদান কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৬ সালের ৮ মার্চ জনস্বার্থে রিট করে বেলা।
রিট আবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালের ১৮ জুন সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মৌলভীবাজার সদর, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলার একটি ছড়াকে সিলিকা বালুসমৃদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করে। এর মধ্যে অযান্ত্রিক পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের জন্য ১৯টি ছড়া ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সরকার ইজারা দেয়। কিন্তু বিদ্যমান খনি ও খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২ সহ বিদ্যমান অন্যান্য আইন অনুযায়ী অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ পন্থায় সিলিকা বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।
ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ২১ মার্চ হাইকোর্ট রুল জারির পাশাপাশি ১৯টি বালুমহালের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। একইসঙ্গে, ইজারাভুক্ত ছড়াসমূহ থেকে সকল প্রকার ড্রিল, ড্রেজার, বোমা মেশিন এবং বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত যান্ত্রিক মেশিনসমূহ অবিলম্বে জব্দ করার জন্য আদালত নির্দেশনা দেন। আদালতের ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে মঙ্গলবার (৩ জুলাই) এই রায় ঘোষণা করা হয়।
আদালতের এই নির্দেশনার পরও রাজনগরসহ জেলার সর্বত্র নদী ছড়ায় বোমা-ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করলেও মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করার অভিযোগ ছিল।