‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী আ.লীগের কেউ না’ তবে আওয়ামী লীগ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর!
প্রকাশিত : ২১ আগস্ট ২০২২ ৩:৪৪ অপরাহ্ণ
মুহিত চৌধুরী:পরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি’র একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সারা দেশে চায়ের কাপে ঝড় বইছে। কেউ বুঝে আবার কেউবা না বুঝে লাফাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। বক্তব্যে তিনি বলেন- ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করতে ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছি।
ভারত সরকারকে কী কী করতে হবে সেটাও তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন। অথচ অবাক করা বিষয় এ নিয়ে কেউ কোন কথা বলছেন না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিক হিসেবে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে।জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হবার পর তিনি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে ব্যাপকভাবে প্রচেষ্টা চালান। তার এই কর্মতৎপরতায় বিএনপি জোটের সকল অপপ্রচার ম্লান হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার তাঁর অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হয়।
এক জন অভিজ্ঞ কূটনীতিক হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে কোন বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি স্রেফ অনুরোধ জানাতে পারেন না। তিনি তাঁর বক্তব্যে ভারত সরকারকে যা যা করতে হবে তা স্পষ্ট করে বলেছেন। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘ দিনের অমিমাংশিত অনেক বিষয় রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধীদল নানা কথা বা সমালোচনা করতেই পারে। এতে দোষের কিছু নাই। আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী এবং কয়েকজন নেতা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের বক্তব্যকে সমর্থন না করে যে স্টাইলে বক্তব্য দিচ্ছেন তা দেখে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতা কর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
সবচেয়ে দু:খজনক হলো আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেছেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি ড. একে আবদুল মোমেন আওয়ামী লীগের কেউ নন। আব্দুর রহমানের এমন শিশুসুলভ বক্তব্যে সিলেট জুড়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
তারা বলছেন ড. মোমেন যদি আওয়ামী লীগের কেউ না হোন তা হলে তিনি কীভাবে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেলেন আর কীভাবে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন?
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানের অবগতির জন্য বলছি- আধুনিক ও আলোকিত সিলেটের স্বপ্নদ্রষ্টা, দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের এই কৃতিসন্তান সিলেট আওয়ামী লীগের দুটি ইউনিটে সম্মানিত সদস্য এবং উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন।
আপনি বলেছেন-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগের কেউ না’ আপনার এ কথাটি সত্য নয়। এ ধরণের মন্তব্য দলের জন্যও মঙ্গল নয়। আপনার মুখে ‘পাকিপ্রেমিক’ দের মতো কথা মানায় না।
আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি- আওয়ামী লীগ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর! পরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি’র অন্তর জুড়ে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনা । ১৯৭২ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক।
ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কর্মজীবন শুরু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শাসন আমলে। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব এবং ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত শিল্প ও বাণিজ্য এবং খনিজ সপম্পদ ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে খুনি মোশতাক চক্র। এর পর ড. মোমেন বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে অস্বস্তিতে পড়ে যান। বিদেশে চলে যাবার সুযোগ খুজেন। বিশেষ সামরিক অর্ডিন্যান্স (৯) জারীর মাধ্যমে তাকে বরখাস্ত করা হয়। এর পর ড. মোমেন বিদেশে পাড়ি জমান।
ড. একে আব্দুল মোমেন যদি খাঁটি আওয়ামী লীগ না হতেন তবে খুনি মোশতাক এবং সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতেন।
ড. মোমেনতো সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি যেনি বঙ্গবন্ধুর সরকার এবং তারই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু যখন প্রেসিডেণ্ট আইয়ূব খানের আহ্বানে রাওয়াপিণ্ডিতে রাউণ্ড টেবিল বেঠকে যোগদান করেন তখন ড. মোমেন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সার্বক্ষনিক সহকারী।
সুতরাং এমন ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এমপিকে নিয়ে পাকিপ্রেমিকদের মতো কথা বলা অন্তত: আওয়ামী লীগ নেতাদের শোভা পায় না। কান চিলে নিয়ে গেছে এটা শুনে দৌড় দেয়া কোন বিবেকবান মানুষের কাজ নয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন বিরোধী দেশী এবং আর্ন্তজাতিক চক্র এটা মেনে নিতে পরছেনা। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়।
দেশের এই ক্রান্তিকালে দলের -কে আওয়ামীলীগ আর কে আওয়ামীলীগ নয় এমন ফতোয়াবাজি সময় এখন নয়।