পঁচাত্তরের স্টাইলে শুরু হয়েছে অপপ্রচার
প্রকাশিত : ২৩ আগস্ট ২০২২ ৮:১৪ অপরাহ্ণ
মুহিত চৌধুরী: পাকিপ্রেমিকদের ধারনা ছিলো করোনা মহামারীতে বাংলাদেশের পথে-ঘাটে লাশ আর লাশ পড়ে থাকবে। সরকার ভ্যাকসিন দিতেও পারবেনা। লন্ডভন্ড হয়ে যাবে সব কিছু। ভেঙ্গে পড়বে দেশের অর্থনীতি। শুরু হবে দুর্ভিক্ষ।
আল্লাহপাকের অশেষ মেহেরবানীতে ‘শকুনের দোয়ায় গরু মরেনি’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ দিক নির্দেশনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি’র সফল ভ্যাকসিন কূটনীতির কারণে কোভিড-১৯ অত্যন্ত সফলভাবে বাংলাদেশ মোকাবেলা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে এবং ইউরোপের অনেক উন্নত রাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে মুত্যুর হার অনেক কম ছিলো।
করোনাকালে গার্মেন্টসসহ শিল্পকারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্তটিও ছিলো সঠিক। যার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি মজবুদ ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে।
অনেক অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন- যে করোনাভাইরাসের অতিমারীর কারণে সবচেয়ে বড় ও সুদূরপ্রসারী যে মন্দাটি ঘটবে বাংলাদেশেও তার বিরাট এক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। এতে বাংলাদেশের সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। শিল্পোৎপাদন, পণ্য বিক্রি ও জনগণের আয় কমে যাবে এবং কর্মী ছাঁটাই, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাবে।
অর্থনীতিবিদদের ভবিষ্যৎ বাণী এখানেও সত্য প্রমানিত হয়নি।
সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে শতকরা ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ছিল শতকরা ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৪৭০ টাকা, বা ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার।
সুতরাং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নতির মহাসড়কে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সূচকে প্রতিবেশি অনেক রাষ্ট্রকেও পিছনে ফেলে সামনে অবস্থান করছে। বাংলাদেশের এই উন্নতি এবং অগ্রগতি মেনে নিতে পারছে না বাংলাদেশের উন্নয়ন বিরোধী অপশক্তি। তারা সেই পঁচাত্তরের স্টাইলে শুরু করেছে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার।কখনও বাংলাদেশ শ্রীলংকা হয়ে যাচ্ছে, দেশে খাদ্যাভাব দেখা দেবে- চলছে এই জাতীয় অপপ্রচার।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের প্রেক্ষাপট তৈরীতে ১৯৭১ সালের পরাজিত স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী পরবর্তিতে চরম ভারত বিরোধী একটি দল, তথাকথিত বিপ্লবীদের একটি অংশ এবং তৎকালীন মিডিয়া যৌথভাবে কাজ করে। অন্যদিকে খুনি মোস্তাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ ভিতরে ভিতরে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। কোথাও হাইজ্যাক-ছিনতাই মারামারির ঘটনা ঘটলে মিডিয়া বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে সম্পৃক্ত করে সংবাদ পরিবেশন করতো। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বের দরবারে হেয় প্রতিপন্ন করতে ১৯৭৪ সালে এই মিডিয়া বাসন্তী নামক এক নারীকে জাল পরিয়ে ছবি তুলেছিলো।
কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় জেলে পরিবারের বাক প্রতিবন্ধী মেয়ে ছিলো বাসন্তী।তাকে জাল পরে লজ্জা নিবারণের ছবি প্রকাশিত হয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়।
সেই পঁচাত্তরের স্টাইলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর আস্থাভাজন মন্ত্রীদের নিয়ে শুরু হয়েছে অপপ্রচার। বক্তব্যের আগ পিছ কাট করে সুবিধামত অংশ নিয়ে সংবাদ প্রচার করে সরকারকে বিব্রত করার প্রয়াশ চালানো হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের মতো একজন সৎ, ভদ্র, মেধাবী,খাটি দেশ প্রেমিক মানুষের প্রতিটি বক্তব্য নিয়ে ট্রল করা, তিলকে তাল বানানো কিছু কিছু মিডিয়ার অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে। এইসব ছদ্মবেশি মিডিয়া আগুনে ঘি ঢালতেই খুবই সিদ্ধহস্ত।
চট্টগ্রামের অনুষ্ঠানটি ছিল জন্মাষ্টমী উৎসব উপলক্ষে । যে ইস্যু নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে সে বিষয়ে তিনি কোন কথা বলেননি। নির্বাচন নিয়ে কোনো কথাই হয়নি। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে কথা হয়েছে।
একই বিষয়ে অন্যান্য বক্তারাও বক্তব্য রেখেছেন। এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বেশ কিছু প্রশ্নও করেন তারা। সেই প্রেক্ষিতে তিনি এই বক্তব্য দিয়েছেন বলে দৈনিকসিলেটডটকমকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি গৌহাটিতে গিয়েছিলাম এবং সেখানে আসামের মুখ্যমন্ত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এজন্য যে, সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ হওয়ায় আসামে স্থিতিশীলতা এসেছে এবং অনেক অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। সুতরাং আমি ভারত সরকারকে বলেছি যে, উভয় দেশের মঙ্গলের জন্য, উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতা খুবই প্রয়োজন। সেজন্য উভয় দেশে কোনো ধরণের সাম্প্রদায়িক ইসুকে ফুলায়ে ফালায়ে প্রচার করে স্থিতিশীলতা যাতে বিঘ্ন না করা হয় তার কথা বলেছি।
ভারতে সাম্প্রদায়িক সমস্যা দেখা দিলে এটা আমাদের দেশকেও আঘাত দেয়। আমি বলেছি শেখ হাসিনা স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের প্রতীক। শেখ হাসিনা থাকলে অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠবে। সুতরাং তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার তা আমরা করবো। বন্ধু প্রতিম দেশ হিসাবে তাদের সহায়তা চেয়েছি।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগকে নির্বাচনে যে কোনো উপায়ে নির্বাচিত করতে হবে— এটা কখনো আমি বলিনি। এটা তারা বানাচ্ছেন। ভারতে আমাদের আলোচনায় কখনো কোন রাজনৈতিক দলের কথা উঠেনি।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো যে সব টিভি মিডিয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে বিব্রত করে আগুনে ঘি ঢালতে চাইছে তাদের মালিকপক্ষ বাহ্যিকভাবে আওয়ামী ঘরানার বলে জনশ্রুতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কাছ থেকে এরা তাদের টেলিভিশনের লাইসেন্স নিয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে স্বেচ্চাচারিতা নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশে ‘হলুদ সাংবাদিকতার কোন স্থান নেই। সুতরাং এখানে এই অপকর্মকরে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি মনে রাখতে হবে।
দেশকে অস্থিতিশীল করতে পাকিপ্রেমী এবং তাদের আর্ন্তজাতিক মুরব্বিরা যে ষড়যন্ত্র করছে এটা আজ অনেকটা স্পষ্ট। তবে কি এরা তাদের সাথে হাত মিলিয়েছে? এমন প্রশ্ন অনেকের।