সুনামগঞ্জে প্রতি মাসে ১৫ জনের বেশি আত্মহত্যা
প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ৭:৫৫ অপরাহ্ণ
সুনামগঞ্জ জেলায় প্রতি মাসে ১৫ জনের বেশি মানুষ স্বেচ্ছায় আত্মহত্যার মতো বিপজ্জনক পথ বেছে নিয়ে জীবন বিসর্জন করছেন।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই ২০-৪০ বছর বয়সী। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত গত ৭ মাসে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আত্মহত্যায় মারা গেছেন ১০৭ জন। যাদের মধ্যে ২০-৪০ বছরের সংখ্যাই বেশি। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি মাসে ১৫ জনের বেশি মারা যাচ্ছেন।
পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় গত ৭ মাসে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৯৪ জন। বিষপানে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩ জন। আত্মহননকারী এসব লোকদের বয়স ২০-৪০ বছরের মধ্যে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পারিবারিক বিরোধ, প্রেমে ব্যর্থ, মানসিক হতাশাই মুখ্য কারণ বলে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। কোনো ধরনের অভিযোগ না পাওয়ায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে সংশ্লিষ্ট থানায়।
জানা যায়, গত ৭ মাসে গলায় ফাঁস ও বিষপানে সদর উপজেলায় ১৫ জন, ছাতক উপজেলায় ফাঁস লাগিয়ে ১৫ জন, জগন্নাথপুর উপজেলায় ফাঁস লাগিয়ে ও বিষপানে ১০ জন, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ফাঁস লাগিয়ে ৪ জন, তাহিরপুর উপজেলায় ফাঁস লাগিয়ে ও বিষপানে ৯ জন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ফাঁস লাগিয়ে ও বিষপানে ৬ জন, জামালগঞ্জ উপজেলায় ফাঁস লাগিয়ে ও বিষপানে ১২ জন, দিরাই উপজেলায় ফাঁস লাগিয়ে ও বিষপানে ৭ জন, শাল্লা উপজেলায় ফাঁস লাগিয়ে ৪ জন, ধর্মপাশা উপজেলায় ও বিষপানে ১২ জন মধ্যনগর থানায় ৪ জন ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ৯ জন আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করেছেন।
এদিকে দেশের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সূচকে পিছিয়ে থাকা জেলা সুনামগঞ্জের জন্য আত্মহত্যার এমন পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ভবিষ্যতে এর ধারা অব্যাহত থাকলে মানব সম্পদের বিপর্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অবক্ষয় আর পারিবারিক রক্ষণশীল সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন অনেকেই। আত্মহত্যার প্রতিরোধে যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ পারিবারিক বিরোধ দমনে তৃণমূল পর্যায়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপরে গুরুত্ব দিয়েছেন তারা।
অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল হাকিম বলেন, আত্মহত্যা মূলত হতাশাজনিত কারণে হয়ে থাকে। একটি মানুষ মরতে চায় যখন তার জীবনযাত্রায় উন্নয়নের কোনো লক্ষণ থাকে না। তার ভবিষ্যতের উন্নতির কোনো স্বপ্ন খুঁজে সে পাচ্ছে না অথবা পারিবারিক কলহ। এসব কিছুর মূলেই অভাব অনটন, হতাশাগ্রস্ত, কর্মস্থানের অভাব।
তিনি আরও বলেন, যেসব কারণে তারা হতাশাগ্রস্ত, সেগুলো যদি চিহ্নিত করে উপশম করা যায় তাহলেই আত্মহত্যার প্রবণতা কমবে। হাওর অঞ্চলে যুবকদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সরকারের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি আত্মহত্যা প্রতিরোধে ইউনিয়ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও স্বাস্থ্য-বিভাগের লোকদের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপরে জোর দিতে হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবু সাইদ বলেন মিজানুর রহমান বলেন, পারিবারিক বিরোধ, প্রেমে ব্যর্থসহ নানা কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে এসব আত্মহত্যা সংঘটিত হয়েছে। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে পুলিশ জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।