মিরপুর ভেসেছিল সাকিবদের কান্নায়, ফারুকীরা ভাসালেন শারজা
প্রকাশিত : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১:৪২ অপরাহ্ণ
পাকিস্তান আনপ্রেডিক্টেবল। তাদের নিয়ে আগে থেকে কিছুই বলা যায় না। একবার কেউ একজন বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান, এক মিনিট নিচে নামে তো পরের মিনিটে উপরে।’ এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরে শেষ ওভারের আগের দুই ওভারে চার উইকেট হারিয়ে নিচে নেমেছিল পাকিস্তান, আর শেষ ওভারে টানা দুটি ছক্কা মেরে তাদের উপরে তুললেন নাসিম শাহ।
১৯৮৬ সালের এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে জাভেদ মিয়াঁদাদের সেই ছক্কা মেরে পাকিস্তানকে জেতানোর স্মৃতিই যেন ফিরেছিল শারজায়। বুধবার নাসিমকে ভর করেছিল মিয়াঁদাদের সেই কীর্তি। বোলার হয়েও ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অনন্য এক ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে তুললেন ফাইনালে। ম্যাচ হাতের মুঠোয় নেওয়ার পর জয় ফসকানোটা মানতে পারেনি আফগান ক্রিকেটাররা।
নাসিমের এমন অবিশ্বাস্য ইনিংসে শারজায় মিয়াঁদাদের স্মৃতি ফিরলেও মোহাম্মদ নবী-ফারুকীদের কান্না মনে করিয়ে দিলো ১০ বছর আগের এক দুঃখগাঁথার গল্প। মিরপুরে ২০১২ সালের মার্চে সেদিন ঠিক একইভাবে হাতের মুঠো থেকে জয় বেরিয়ে যায় বাংলাদেশের। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের সে কী কান্না! পাকিস্তানকে যখন ট্রফি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল, তখন সাকিবের বুকে মুখ গুঁজে কেঁদে চলেছেন মুশফিক। সাকিবও কান্না চেপে রাখতে চাইছেন, কিন্তু পারছেন না।
শেষ ওভারে মাত্র ৯ রানের দরকার ছিল বাংলাদেশের। উইকেটে ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক ও মাহমুদউল্লাহ। পাকিস্তানের লাগতো ৩ উইকেট। আইজাজ চিমার আঁটসাট বোলিংয়ে রাজ্জাক তো উইকেট হারালেনই, ৬ রানের বেশি এলো না। তখন মাহমুদউল্লাহ ১৭ রানে অপরাজিত, অন্য প্রান্তে ছিলেন শাহাদাত হোসেন। আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরে যায় ফাইনাল।
মাশরাফি মুর্তজা, নাসির হোসেন ও তামিম ইকবালদের বিষাদে ভরা চেহারা আজও দেশের ক্রিকেট ভক্তদের ভাবায়। মুশফিক-সাকিবদের কান্না ছুঁয়ে গিয়েছিল গ্যালারির সবাইকে। হারের ক্ষোভ মুছে ফেলেছিল তাদের কান্না।
ফারুকীরাও কাঁদলেন। এমন অবিশ্বাস্য হার যে হারতে হবে সেটা ঘুণাক্ষরেও তারা টের পাননি শেষ ওভার করতে যাওয়ার আগে। ক্রিজে ছিলেন শেষ জুটি, যেখানে ব্যাটিংয়ে দুই বোলার। স্ট্রাইকে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে মাত্র তিন বল খেলা নাসিম, কিন্তু তিনিই যে এমন কিছু করে ফেলবেন তা হয়তো পাকিস্তানের ড্রেসিংরুমেও কেউ কল্পনা করেননি।
আগের তিন ওভারে তিন উইকেট নেওয়া ফারুকী করলেন ভুল। দলের পরিকল্পনা ছিল ইয়র্কার কিংবা ধীরগতির বল করা। কিন্তু ফুল টস পেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে লং অফ দিয়ে ছক্কা হাঁকালেন নাসিম, পরেরটিও একই বল। আবারও ছয়। পাকিস্তানের ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান দিলেন এক দৌড়, ব্যাট-হেলমেট-গ্লাভস ছুড়ে ফেলে উল্লাসে মাতলেন। তাকে ঘিরে ধরলেন অন্যরাও। বাবর-রিজওয়ানরা ড্রেসিংরুম থেকে সিড়ি দিয়ে দৌড়ে মাঠে ঢুকে আনন্দে মাতলেন নাসিমকে নিয়ে।
অন্যদিকে নির্বাক ফারুকী। বিশ্বাসই করতে পারছেন না কী হয়ে গেলো! অশ্রু ছলছল চোখে তাকে সান্ত্বনা দিতে এলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। নাজিবউল্লাহ জাদরান এসে বুকে টেনে নেন ফারুকীকে। আফগান পেসার মনে করিয়ে দেন মুশফিকের সেই হু হু করে কান্নার স্মৃতি। উইকেটকিপার রহমানউল্লাহ গুরবাজ মনের কষ্টে মুখ ঢাকলেন। কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়লেন আরও কয়েকজন আফগান ক্রিকেটার।
তাদের কান্না হৃদয় ছুঁয়েছে ক্রিকেট ভক্তদের। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের ক্ষোভ যেন ম্লান হয়ে গেছে তাদের দুঃখগাঁথা গল্পের কাছে। সেই পাকিস্তান, আর একই বিন্দুতে সাকিব-ফারুকীদের কান্না।