সিলেটে অফিসের ফটকে টেন্ডার বয়কটের ঘোষণা
প্রকাশিত : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ৫:৩৭ অপরাহ্ণ
সিলেটের নবাব রোডের এলজিইডি ভবন। সেখানে টানানো ব্যানার। ঠিকাদারদের ঘোষণা- ‘টেন্ডার বয়কট করা হলো’। শিক্ষা ভবনের সাইনবোর্ডের নিচে টানানো এমনই আরেকটি ব্যানার। সেখানে লিখা- ‘সব ধরনের টেন্ডার বয়কট করা হলো’। এই ঘোষণায় সিলেটের উন্নয়ন সম্পর্কিত দুটি কার্যালয়ে স্থবিরতা বিরাজ করছে। সিলেট জেলার ১৩ উপজেলার প্রকৌশল কার্যালয়েও ঝুলছে একই ধরনের ব্যানার।
ঠিকাদাররা জানিয়েছেন, সিলেটের এলজিইডি ভবনে এই ব্যানার টানানো হয়েছে গত ৩১শে আগস্ট ও শিক্ষা ভবনে টেন্ডার টানানো হয়েছে ৪ঠা আগস্ট। ঠিকাদাররা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যানার টানিয়েছেন। তারা কোনো টেন্ডারে অংশ নিচ্ছেন না।
ঠিকাদাররা জানিয়েছেন,সিলেটের এলজিইডি’র ঠিকাদাররা প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়ে এই ঘোষণা দেন। কারণ হচ্ছে; নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রকল্পের কাজে তারা লোকসানে পড়ছেন। এ কারণে বাধ্য হয়েই তারা নতুন ঘোষিত টেন্ডার বয়কটের সিদ্ধান্তে গেছেন। তবে চলমান কাজ লোকসান দিয়ে হলেও তারা শেষ করছেন। সিলেট জেলা এলজিইডি কন্ট্রাক্টর ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের নেতারা গত ১লা সেপ্টেম্বর ঢাকার এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী বরাবর একটি পত্র দিয়েছেন।
এতে তারা উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ঠিকাদাররা লোকসানের মুখে রয়েছেন।
এই অবস্থায় ২০২২ সালের জুন মাসে নতুন যে রেট শিডিউল করা হয়েছে সেটি বাজার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়। ওই পত্রে তারা নির্মাণসামগ্রীর বাজার দরের অসামঞ্জস্যের কথা উল্লেখ করেন- প্রতি কেজি রডে ২৩ টাকা, প্রতি ব্যাগ সিমেন্টে ১৪৫ টাকা, প্রতিটি ইটে ৪ টাকা, প্রতি লিটার বিটুমিনে ১৫ টাকা ও প্রতি লিটার ডিজেলে ২৯ টাকা ঠিকাদারদের পকেট থেকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এতে করে লভ্যাংশের টাকা থাকে না। উল্টো লোকসান দিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হয়।
এলজিইডির ঠিকাদাররা জানিয়েছেন, ৩০শে আগস্ট থেকে তারা সব ধরনের টেন্ডার বর্জন করার কারণে এখন পর্যন্ত ঘোষিত দুটি ব্রিজের মেরামত ও আরও ৫টি সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ কাজের টেন্ডারে কেউ অংশ নেননি। এতে করে প্রায় ৪ কোটি টাকার কাজ আটকে গেল। বাজার দর পুনর্বিবেচনা না করলে আগামীতে তারা কোনো টেন্ডারে অংশ নেবেন না।
সিলেট জেলা এলজিইডি কন্ট্রাক্টর ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি রাখাল দে জানিয়েছেন, এখন যেসব কাজ চলমান সেগুলোতে লোকসান দিয়ে ঠিকাদাররা কাজ করছেন। যেহেতু টেন্ডার নিয়েছেন সেহেতু লোকসান দিয়েও কাজ করা হচ্ছে।
কিন্তু নতুন করে কেউ টেন্ডারে অংশ নিচ্ছেন না। সেটি সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই করা হচ্ছে। লোকসানে প্রকল্পের কাজ নেয়ার এখন কোনো সুযোগও নেই। আমাদের দাবি মেনে বাজার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন দর নির্ধারণ করা হলে আমরা টেন্ডারে অংশ নেবো। চূড়ান্ত ঘোষণার আগে এ বিষয়ে আমরা চিঠি চালাচালি সহ দাপ্তরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করলেও কোনো ফল আসেনি।
এদিকে- এবার ভয়াবহ বন্যায় সিলেট জেলার ৮০ শতাংশ রাস্তায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব রাস্তার অনেকটিতে কাজ চলমান ছিল। বন্যার পানির তোড়ে চলমান কাজ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিলেট জেলা এলজিইডি কন্ট্রাক্টর ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আবুল কালাম জানিয়েছেন,বন্যায় যেসব ঠিকাদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রতিও মানবিকতা দেখানো হয়নি। কোনো কোনো ঠিকাদারের দ্বিগুণ, তিনগুণ ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের কাছে বার বার অনুরোধ জানালেও তারা ঠিকাদারদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না। অথচ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সব মহলের দিকেই সরকার মানবিক রয়েছে। এ নিয়ে ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ঠিকাদাররা জানিয়েছেন, শুধু সিলেট নয়, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের এলজিইডি কন্ট্রাক্টর এসোসিয়েশনের নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়ে টেন্ডার বয়কট করছেন।
হবিগঞ্জের কন্ট্রাক্টর এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক জানিয়েছেন- সম্প্রতি তিনি নিজেই ৮০ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে ১৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ শেষ করেছেন। মার্কেটে সব জিনিসের দাম বাড়ে আর টেন্ডারে সরকার জিনিসের দাম কমায়।এ কারণে গেল কয়েক দিনে হবিগঞ্জে প্রায় ১৭ কোটি টাকার রক্ষণাবেক্ষণ কাজের টেন্ডারে কেউ অংশ নেননি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা টেন্ডার বর্জন করবো।
এলজিইডি সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস জানিয়েছেন, পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ঠিকাদাররা টেন্ডারে অংশ নিচ্ছেন না বলে শুনেছি। এতে সাময়িকভাবে উন্নয়ন কাজে বিলম্ব হতে পারে। তবে- বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশাকরি সব ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে- শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদার এসোসিয়েশনের সভাপতি নিরেশ দাস জানিয়েছেন, নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এ কারণে ঠিকাদাররা নতুন কোনো টেন্ডারে অংশ নেবেন না। তবে- মাঠে পড়ে আছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার কাজ। অনেক ঠিকাদার লোকসানের মুখে পড়ার কারণে নির্মাণসামগ্রীর দাম কমার অপেক্ষায় রয়েছেন।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেট সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল হাকিম জানিয়েছেন, ঠিকাদাররা টেন্ডারে অংশ নিচ্ছেন কিনা সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। আজ টেন্ডার ওপেন করা হবে। এরপর বুঝা যাবে তাদের অবস্থান কী। তবে- চলমান প্রকল্পে কাজ করছেন ঠিকাদাররা। সেখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।