জেলা পরিষদ নির্বাচন: সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে ভোটের লড়াই
প্রকাশিত : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:১৫ অপরাহ্ণ
জেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলেট ও মৌলভীবাজারের প্রার্থীরা ‘ওয়াকওভার’ পেলেও সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে হবে শক্ত লড়াই। তবে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে দুই প্রার্থীকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। এই দুই প্রার্থী হচ্ছেন সুনামগঞ্জের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল হুদা মুকুট ও হবিগঞ্জের আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী।
বেশি আলোচনা সুনামগঞ্জ নিয়ে। জেলায় দলের বড় পদে না থাকলেও নুরুল হুদা মুকুটের নাম বহুল আলোচিত। তার প্রভাব জেলার সর্বত্র। তবে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বরাবরই নিজেকে সুদৃঢ় অবস্থানে রাখা মুকুটের প্রতিপক্ষও এবার শক্ত অবস্থানে। সরকারি আইন কর্মকর্তা (পিপি) পদে ইস্তফা দিয়ে মুকুটকে মোকাবিলায় নৌকার প্রার্থী খায়রুল কবির রুমেনকে নিয়ে একাট্টা সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগ।
বিদ্রোহী প্রার্থী মুকুট বলেন, রাজনীতির মাঠে আমার প্রতিদ্বন্দ্বীর পরিচয় এখনও অনেকেই জানেন না। তাছাড়া তিনি কোর্টের পিপি তাই নির্বাচনও করতে পারবেন না। আমি কেন্দ্রের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। একমাত্র এমপি মানিক ছাড়া সুনামগঞ্জের সবাই আমার সঙ্গে আছেন।
নৌকার প্রার্থী খায়রুল কবির রুমেন বলেন, আমি পিপি পদে ইস্তফা দিয়েই প্রার্থী হয়েছি। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী দল, প্রতীক, আদর্শ বিসর্জন দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। তারপরও দাবি করছেন সবাই তার সঙ্গে আছেন! তার সাথে কে নেই এটা যেভাবে বলেছেন কারা আছেন তাদের নামগুলো বললে ভালো হতো।
এদিকে, নির্বাচনপূর্ব রুমেনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক দেখা যাচ্ছে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট নান্টু রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুর রহমান সিরাজ, অর্থ সম্পাদক ইশতিয়াক শামীম, স্থানীয় নেতা সুবীর তালুকদার বাপ্টু, ফজলুল করিম, মোবারক হোসেন, আতিকুর রহমান, সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল তুহিন, দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান তানভীর আশরাফী বাবু, অ্যাডভোকেট নানু মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক নুরে আলম উজ্জ্বল, ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য শামীম আহমেদ মুরাদ, জগন্নাথপুরের সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসান, জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আকমল খানসহ আরও অনেককেই।
অপরদিকে বিদ্রোহী মুকুটের সঙ্গে রয়েছেন সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ী জিয়াউল হক, পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট বিমান রায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি তহুর আলী, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল বরকত, স্থানীয় নেতা নুরুল হক, আব্দুল হাই, আব্দুর রশিদ, আব্দুল ওয়াদুদ, শান্তিগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র আহমদ নুরসহ অনেকেই। গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরিকল্পনামন্ত্রী ও সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ-সদস্য এমএ মান্নান ছাড়া জেলার সব এমপি ছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থী মুকুটের পক্ষে। তবে এবারের নির্বাচনের চিত্র একবারেই ভিন্ন। জেলার সব এমপিরা শেখ হাসিনা মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে রয়েছেন। ফলে এবার বড় বেকায়দায় মুকুট।
জেলা পরিষদের প্রশাসক মুকুটের বিরুদ্ধে ২১ সেপ্টেম্বর পরিষদের ১০ সদস্য স্বেচ্ছাচারিতা ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ আনেন। লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরকারী সদস্যদের সম্মানি ভাতা আটকে রাখার অভিযোগও রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক ও সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী নুরুল হুদা মুকুট ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সুনামগঞ্জ জজকোর্টের সদ্য সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট খায়রুল কবির রুমেন দুজনেই সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও সুনামগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনে ১২ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৪২ জনসহ মোট ৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রশাসক আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আ.লীগ নেতা শাহীন আহমেদ, জাপার (এরশাদ) অ্যাডভোকেট শিবলী খায়ের ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম।
হবিগঞ্জের বর্তমান প্রশাসক ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী বলেন, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিদ্রোহী কিছু রাজনৈতিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আঁতাত করে মাঠে নেমেছেন। কোটি কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। রাজনীতির মাঠে ডিস্টার্ব করার জন্য তাকে মাঠে নামানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা, প্রায়ই পলাতক থাকেন। তবে দলের সবাই আমার সঙ্গে আছেন।
হবিগঞ্জে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শাহীন বলেন, আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে কোনো লাভ নেই। ৩ কোটি টাকায় সুনামগঞ্জ সদরের বাড়ি বিক্রি করে মাঠে নেমেছি। বিদেশের মাটিতে বাসা ভাড়া দিয়ে বড় অঙ্কের টাকা পাই। দেশে-বিদেশে আমার ট্যাক্স ফাইল ক্লিয়ার। আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও ছিল না। সম্প্রতি একটি মামলা হয়েছে শুনেছি। খুব সম্ভবত আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আড়ালে থেকে এটা করিয়েছেন। এ নিয়ে আমি উচ্চ আদালতে যাব।