হাওরাঞ্চলে বোরো আবাদে আশা জাগাচ্ছে সোলার পাম্প
প্রকাশিত : ১২ মার্চ ২০২৩ ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
চলতি বোরো মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে জ্বালানি সংকটের মধ্যেই আশা জাগাচ্ছে সৌরবিদ্যুৎচালিত (সোলার) পাম্প। সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে এ পাম্পের মাধ্যমে বোরো ধানের জমিতে সেচ দিচ্ছেন কৃষকরা। এতে একদিকে যেমন জ্বালানি সাশ্রয় হচ্ছে, অন্যদিকে কমে গেছে ধান উৎপাদনের খরচ। স্বস্তি মিলেছে কৃষকদের জীবনে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোলার পাম্পের মাধ্যমে সেচ দেওয়ায় বদলে যাচ্ছে হাওরের কৃষি। শুকনো মৌসুমে বোরো ফসল উৎপাদনে সেচ একটি অপরিহার্য বিষয়। এই সেচের জন্য ডিজেল বা বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে ফসল উৎপাদনে খরচ পড়ে অনেক বেশি। বাড়তি খরচ কিংবা ঝামেলা না থাকায় বর্তমানে সোলার পাম্পের দিকে ঝুঁকছেন হাওরাঞ্চলের কৃষকরা।
ডিজেলচালিত ইঞ্জিনের সাহায্যে ধান উৎপাদনে যে খরচ হয়, সোলার সেচ পদ্ধতিতে ব্যয় হয় তার অর্ধেক। মধ্যনগর উপজেলার হাওরের আশপাশের জমিতে সোলার প্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ দিয়ে বোরো আবাদ করতে দেখা গেছে কৃষকদের। ভোগান্তি নিরসনের পাশাপাশি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় ইচ্ছেমতো সেচসুবিধা পাচ্ছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মধ্যনগর ও ধর্মপাশার হাওরাঞ্চলে চলতি বছর ৩১ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার টন। সৌরশক্তিচালিত পাম্পে সেচ খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় হাওরাঞ্চলে এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের সোলার পাম্পের সুবিধা নেওয়া কৃষক পীযূষ সরকার বলেন, আমরা সোলারের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিচ্ছি। এতে আমাদের বোরো উৎপাদন খরচ অনেক কমে গেছে। বর্তমানে এক বিঘা জমিতে সোলার পাম্প দিয়ে সেচ দিতে খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা। এই টাকা পরিশোধ করতে হবে ফসল কেটে ঘরে তুলে বিক্রি করার পর।
একই ইউনিয়নের কৃষক আবদুল হাসিম জানান, সোলার পাম্পের মাধ্যমে সেচ দেওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে আসে। এর কারণে কিছুটা হলেও লাভবান হওয়া সম্ভব।
সোলার পাম্পের মালিক জীবন বিশ্বাস বলেন, সৌরবিদ্যুৎচালিত পাম্পের কারণে অল্প খরচে বোরো ধান রোপণ করা যাচ্ছে। শ্যালো মেশিনে তেল, মেশিন চুরি, নষ্টের ভয় ছিল; শব্দদূষণও হতো। এখন আর এসবের ভয় নেই।
তবে কৃষকরা বলছেন, সোলার পাম্পের দাম অনেক হওয়ায় তারা নিজেরা এটা কিনতে পারছেন না। অন্যের সোলার পাম্পে বিঘাপ্রতি ১ হাজার ৮০০ টাকা চুক্তিতে নিজেদের জমিতে সেচ দিয়ে নিচ্ছেন। সোলার পাম্পের দাম কম হলে পাম্প কিনে নিজেদের জমিতে সেচ দিলে খরচ আরও অনেক কমে যেত। সোলার পাম্পের দাম যাতে প্রান্তিক কৃষকদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসে সে ব্যপারে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না বলেন, দুই উপজেলায় যে পরিমাণ বোরো ফসলের আবাদ হয়েছে, সেই জমিগুলোতে যদি বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত পাম্পের পাশাপাশি সৌরশক্তিচালিত পাম্পের মাধ্যমে সেচ দেওয়া যায়, তাহলে কম খরচে কৃষক বোরো ফসলের আবাদ করতে পারবে।
ইউএনও নাহিদ হাসান খান বলেন, বিএডিসির অনুমোদন ছাড়াই দিনদিন সৌরচালিত সেচ পাম্পের ব্যবহার বাড়ছে। বিএডিসি সৌরশক্তিচালিত পাম্পের ব্যবহার বাড়ানোর ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহিত করলে স্বল্প খরচে কৃষক বোরো আবাদ করতে পারবে। আশা করি, হাওরাঞ্চলের কৃষিতে সৌরশক্তিচালিত সেচপাম্প বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।