সুনামগঞ্জে বালুর নিচে লুকিয়ে থাকা বাম্পার গুপ্তধন তুলছেন কৃষক
প্রকাশিত : ০৮ মে ২০২৩ ৩:২০ অপরাহ্ণ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জে এবার বাদামের ভাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার অনেক কৃষক এবার বোরো জমি ছাড়াও পতিত জমিতেও বাদাম চাষ করেছেন। সাদা বালুর জমিনে সবুজে ছেয়ে গেছে লতানো বাদামের গাছে। প্রতিটি বাদাম গাছের মুঠি ধরে টান দিলেই উঠে আসছে থোকা থোকা সোনালি রঙের বাদাম। এ যেন বালুর নিচে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধন। আর তা ঘরে তুলতে ব্যস্ত শত শত কৃষক। বোরো ধানের পর এবার বাদাম ক্ষেতে যে উৎসব মুখর পরিবেশের বাদাম তোলছেন সবাই।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়,বাদাম একটু বেলে দোআঁশ মাটি ও উঁচু এলাকায় বাদাম চাষ ভালো হয়। জমিতে সামান্য বৃষ্টির কারণে যদি পানি জমে যায় তাহলে গাছ পচে যাবে। বালু মাটিতে অন্য কোন ফসল উৎপাদন করে বাদামের সমপরিমাণ লাভ হয় না। অন্যান্য ফসল উৎপাদনের চেয়ে বাদাম উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় বালুতে আমরা সবাই বাদামের চাষ করেছি। বাদাম রোপণের পর অন্য ফসলে ন্যায় কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। নেই রাসায়নিক সারের ব্যবহার। বীজ রোপণ আর পরিপক্ব বাদাম উঠানোর শ্রমিক খরচ ছাড়া তেমন কোন খরচ নেই বললেই চলে। একটি ফসলেই কৃষকদের সারা বছরের সংসার চলে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,সুনামগঞ্জে দুইটি মৌসুমে বাদাম চাষ হয়। অক্টোবরের শেষের দিকে বীজ বপন করা হয়। সে বীজ থেকে তিন মাস পরে বাদাম তোলা হয়। আবার জানুয়ারি মাসে বীজ বপন করে এপ্রিল-মে মাসে বাদাম তোলা হয়। জেলার তাহিরপুর,
জামালগঞ্জ,বিশ্বম্ভরপুর,সুনামগঞ্জ সদরসহ ৬ টি উপজেলার ৫০টি গ্রামে বাদামের চাষ হয়েছে। তৃদানা,বালি,চিনা বাদাম,বিনা ৪,৮ ও ঢাকা জাতের বাদাম। প্রতি কিয়ারে বাদাম চাষে খরচ হয়েছে ১০হাজার টাকা আর বিক্রি হচ্ছে ১৪-১৫ হাজার টাকা। এবার তিন হাজার আটশত ৪০মেট্রিক টন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে। সারও কীটনাশক বিনা মূল্যে দেয়ায় এমন সাফল্য পেয়েছে কৃষক দাবী কৃষি অফিসের।
সরজমিনে জেলার বিভিন্ন হাওরে গিয়ে দেখা যায়,মাঠ জুড়ে সবুজ পাতার সমারোহে প্রখর রোদের মধ্যেই উৎসব মুখর পরিবেশে শিশু,নারী ও পুরুষ সবাই বাদাম তুলছে। কেউ বাদামের গাছ তুলছেন কেউ আবার গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়ে রাখছেন। অনেকেই আবার শখের বসে,বাড়তি আয়ের জন্য,অনেকে আবার নিজেরা খাবারের জন্য বাদাম তুলতে এসেছেন। তবে বিনা পারিশ্রমিকে বাদাম তুলছে না মানুষ জন।
বাদাম তুলতে আসা সাজিদ মিয়া জানান,অনেকে জায়গায় সবাই মিলে যে পরিমাণ বাদাম তুলেন তা জমিয়ে ১০ভাগ করে নয় ভাগ কৃষকের আর এক ভাগ যারা তুলবে তাদের। এতে করে যারা বাদাম তুলছেন সারাদিন ৪-৫শত টাকার বাদাম পেয়ে যান। আবার কোন কোন দিন আরও বেশী। এতে করে ভালই লাভবান হচ্ছেন সবাই।
বাদাম চাষিদের সাথে কথা বলে জানায়,একটু নিচু জমিতে বোরো ধান চাষ এবং অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে চাষ করা হয় বাদাম। জানুয়ারি(পৌষ মাসে)বাদাম রোপণ করা হয় আর এপ্রিল থেকে মে মাসে বাদাম তোলা হয়। গত মৌসুমে চেয়ে এবার বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। কম পরিশ্রমে বেশী লাভবান হওয়া যায় বিধায় গত বছরের তুলনায় এবার অনেক কৃষক আগ্রহী হয়ে বোরো ধানের পরিবর্তিতে বাদাম চাষ করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র দাস জানান,জেলার গত বছর ১২২৫ হেক্টর বিভিন্ন জাতের বাদামের চাষ করা হয়েছে।চলতি বছর ১৭০৮ হেক্টর লক্ষ্যমাত্র ছিল চাষ হয়েছে ১৭২৬ হেক্টর। এতে ৩ হাজার ২শত মেট্রিকটন বাদাম উৎপাদন হবে। এর মূল্য ৩২ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ৫শত হেক্টর বাদাম তোলা হয়েছে আরও ১৫দিন লাগবে বাদাম তোলা শেষ হতে। এবার কৃষকরা চাষ করেছেন,ঢাকা ১,বারি চিনা বাদাম ৮,বিনা চিনা বাদাম ৮, বাকিটা স্থানীয়। সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয়েছে জেলার তাহিরপুর উপজেলায়।