ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আজ মাঠে নামছে অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা
প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১:০৪ অপরাহ্ণ
ক্রীড়া ডেস্ক: ইডেন গার্ডেনে বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আজ বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) মুখোমুখি হচ্ছে ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে ‘চোকার্স’ তকমা থেকে এবার অন্তত বেরিয়ে আসতে চায় প্রোটিয়ারা। অন্যদিকে, টানা ৭ ম্যাচ অপরাজিত অজিরা নিজেদের ষষ্ঠ শিরোপা জয়ের উদ্দেশে মাঠে নামছে।
গ্রুপপর্বের ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ১৩৪ রানে পরাজিত হয়েছিল ওয়ার্নাররা। তাই আজ পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিতে বাড়তি এক উদ্দীপনা যোগাচ্ছে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা প্রোটিয়াদের। তবে এর আগে বিশ্বকাপের সেমিতে দুবারই পরাজয়ের শিকার দক্ষিণ আফ্রিকার অজিদের সমীহ না করে উপায় নেই।
এর আগে বিশ্বকাপে চারবার সেমিফাইনালে খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু কোনোবারই ফাইনালের টিকেট পায়নি, এর মধ্যে দুইবার হেরেছে অস্ট্রেলিয়ার কাছে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে এজবাস্টনে ম্যাচটি টাই হলেও গ্রুপপর্বে এগিয়ে থাকার কারণে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। এবারের আসরে গ্রুপপর্বে ৯টি ম্যাচে সাতটিতেই জয়ী হয়ে দুর্দান্ত দাপটের সঙ্গে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে দুদলই। টুর্নামেন্টে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই রানের দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিল টেম্বা বাভুমার দল। অন্যদিকে টানা দুই হারের পর সাত ম্যাচ টানা জেতা অজিরাও রয়েছেন দারুণ ছন্দে। এর মধ্যে মাত্র ৯১ রানে ৭ উইকেট হারানোর পরও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অপরাজিত ২০১ রানের অভাবনীয় ইনিংসে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া।
সর্বশেষ চার মোকাবিলায় প্রতিটিতেই জয়ী হয়েছে প্রোটিয়ারা। দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার রাসি ফন ডার ডুসেন অতীতের হতাশা কথা ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, ‘১৯৯৯ সালে আমার বয়স ছিল ১০ বছর। ওই বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ জয়ের দারুণ সুযোগ ছিল। আমি মনে করি এবারো আমাদের সেই সুযোগ আছে।’ লেগস্পিনার তাবরিজ শামসি বলেছে অতীত সবসময় সবকিছু প্রমাণ করে না।
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই দলটি ভিন্ন আমেজের একটি দল। কখনই বিশ্বকাপে ফাইনালে খেলেনি দক্ষিণ আফ্রিকা, এ কারণেই সুযোগটা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ট্রাভিস হেড জানিয়েছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য যে পরিশ্রম করেছি। তাই শেষটাও যেন ভালো হয় সেই প্রত্যাশাই করছি। আমি নিশ্চিত প্রত্যেকের চিন্তায় এখন একটিই বিষয়, ফাইনালে খেলা।’ আফগানিস্তানের বিপক্ষে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে আক্রান্ত হবার কারনে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক বাভুমার ফিটনেস নিয়ে কিছুটা শঙ্কা ছিল। কিন্তু ইডেনের নেটে তাকে অনুশীলন করতে দেখে সব শঙ্কা দূর হয়ে গেছে। প্রোটিয়াদের ব্যাটিং এবারের বিশ্বকাপে সবার বাড়তি নজড় কেড়েছে।
বিশেষ করে ওপেনার কুইন্টন ডি কক যেভাবে একের পর এক বড় ইনিংস খেলে নিজেকে প্রমাণ করেছেন তাতে তার প্রশংসা করতেই হয়। গ্রুপপর্ব শেষে ভারতীয় ব্যাটার বিরাট কোহলির পর ৫৯১ রান নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ডি কক। ইতোমধ্যেই এবারের আসরে করে ফেলেছেন চারটি সেঞ্চুরি। এর মধ্যে একটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। এছাড়া ৪৪২ রান এসেছে রাসি ফন ডার ডুসেনের ব্যাট থেকে। ডেথ ওভারে দারুণ কার্যকর মার্করাম, শেষ ১০ ওভারে তিনি প্রতি ১০০ বলে তুলেছেন ২৪৪.৪৪ রান। প্রতি ২.৪ বলে মেরেছেন বাউন্ডারি।
এছাড়াও দলের প্রয়োজনে জ¦লে উঠেছেন হেনরিক ক্লাসেন, ডেভিড মিলার ও মার্কো জানসেররাও। যদিও রান তাড়া করার সমস্যা প্রোটিয়াদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। ভারত ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পরাজিত ম্যাচ দুটিতেই পরে ব্যাটিং করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্যদিকে পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টানা দুটি শতক করা অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারও রয়েছেন একাদশে। এখন পর্যন্ত তিনি এক অঙ্কে আউট হননি, সব মিলিয়ে করেছেন ৪৯৯ রান। দলে ফিরেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ট্রাভিস হেডও।
এছাড়া ৭ ম্যাচে ম্যাক্সওয়েলের রান ৩৯৭। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪০ বলে করা শতকে ভেঙেছেন বিশ্বকাপে দ্রুততম শতকের রেকর্ড। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইনজুরি নিয়ে খেলেছেন ২০১ রানের অপরাজিত ইনিংস, যা বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা। টাইগারদের বিপক্ষে শেষম্যাচে অপরাজিত ১৭৭ রানের ইনিংস খেলা মিচেল মার্শকেও ভাবনায় রাখতে হবে প্রোটিয়া বোলারদের। প্রতিপক্ষ ব্যর্থ হলেও রান তাড়া করার ব্যপারে শতভাগ সফল অস্ট্রেলিয়া।
সেমির আগে সুখবর পেয়েছেন প্রোটিয়া স্পিনার কেশব মহারাজ। সিরাজকে হটিয়ে ওয়ানডে বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে উঠেছেন তিনি। বল হাতে দারুণ করছেন দুই পেসার জেরাল্ড কোয়েটজে ও মার্কো জানসেন। দুজনের রয়েছে যথাক্রমে ১৮ ও ১৭টি উইকেট। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ান লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পা আসরে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২২ উইকেট নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছেন। অজিদের পেস বোলিং লাইনআপে রয়েছেন মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স ও জশ হ্যাজেলউডের মতো বোলাররা। তাই আজ কলকাতায় শেষ হাসি হাসবে কে, তা কেবল সময়ই বলে দিবে।